জাত পরিচিতি
ব্রি ধান১০৮ এর কৌলিক সারি নং বিআরএইচ১১-৯-১১-৪-৫বি। এ উফশী জাতটি বোরো মৌসুমে সারা দেশে চাষের জন্য নির্বাচন করা হয়েছে। এই জাতের গ্রেইন টাইপ জিরা ধানের মতো মিডিয়াম শ্লেন্ডার (medium slender grain). IR80561A (CMS line) এবং China inbred 321 এর মধ্যে সংকরায়ণ এবং কৌলিক বাছাই (Pedigree Selection) পদ্ধতিতে বিআরএইচ১১-৯-১১-৪-৫বি উদ্ভাবিত হয়। উক্ত কৌলিক সারিটির গবেষণা কার্যক্রম ব্রি’তে ২০১২ সন থেকে শুরু হয়। NATP-PIU-BARC প্রকল্পের আওতায় বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট (ব্রি), গাজীপুর এবং বির আঞ্চলিক কার্যালয় সমূহের গবেষণা মাঠে এবং দেশের বিভিন্ন এলাকায় কৃষকের মাঠে নানা কৃষি পরিবেশে দীর্ঘ সময় ধরে এই নতুন কৌলিক সারিটির উপযোগিতা, বৃদ্ধি-বিকাশ, ফলন ও অন্যান্য কাংখিত বৈশিষ্ট্য সমূহের ব্যাপক ও নিবিড় পর্যবেক্ষণ- পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হয়। অতঃপর ২০২২ সালে বীজ প্রজ্যয়ন এজেন্সী কর্তৃক স্থাপিত প্রস্তাবিত জাতের ফলন পরীক্ষায় (পিভিটি) সন্তোষজনক হওয়ায় ৯ জানুয়ারী, ২০২৪ সালে জাতীয় বীজ বোডের ১১১ তম সভায় এ কৌলিক সারিটি ব্রি ধান১০৮ নামে বোরো মৌসুমে সারা দেশে চাষাবাদের জন্য অবমুক্ত করা হয়।
জাতের বৈশিষ্ট্য
▶ উফশী ধানের সকল বৈশিষ্ট্য বিদ্যমান- যা বোরো মৌসুমে সারা দেশে চাষের জন্য উপযোগী।
▶ ডিগ পাতা খাড়া ও লম্বা এবং পাতার রং গাঢ় সবুজ।
▶ ১০২ সেমি উচ্চতার পূর্ণ বয়স্ক লম্বা গাছ খুব মজবুত, সহজে হেলে পড়েনা।
▶ প্রধান বৈশিষ্ট্য হলো-এর প্রতিটি ছড়া অধিক সংখ্যক ধান (২৫০-২৭০টি) ঘনভাবে সন্নিবেশিত।
▶ জাতটির চাল মাঝারী লম্বা ও চিকন- যা জিরার চালের অনুরুপ এবং ভাত ঝরঝরে, রং সাদা।
► ১০০০ টি পুষ্ট ধানের ওজন ১৬.৩ গ্রাম।
▶ ধানের রং সোনালী ও আকৃতি চিকন এবং মাঝারী লম্বা।
▶ চালে অ্যামাইলোজ এর পরিমাণ ২৪.৫% এবং ভাত ঝরঝরে।
▶ চালে প্রোটিন এর পরিমাণ ৮.৮%।
এ জাতের বিশেষ প্রয়োজনীয়তা
ব্রি ধান১০৮ এর চালের আকৃতি চিকন এবং মাঝারী লম্বা- যা জিরা ধানের চালের অনুরুপ, ব্রি ধান২৮, ২৯ ও ১০০ থেকে উন্নত। ১০০০ টি পুষ্ট চালের ওজন ১৬.৩ গ্রাম, যা ব্রি ধান১০০ এর থেকেও কম। ভাত ঝরঝরে, রং সাদা। এই জাতটির ধান সরু হওয়ায় মিলিং এর সময় বেশী পলিশ করার প্রয়োজন হবে না। ব্রি ধান১০৮ জাতটি আবাদ করে কৃষকগন প্রচলিত জাতের চেয়ে ভালো বাজার মূল্য পাবেন। ব্রি ধান১০৮ বোরো মৌসুমে সারা দেশে চাষের জন্য উপযোগী, তবে উত্তরাঞ্চলের কৃষকগন ভালো বাজার মূল্য পাওয়ার জন্য বোরোতে জিরা ধানের বিকল্প হিসাবে ব্রি ধান১০৮ ব্যপক আবাদ করতে পারবেন। ব্রি ধান১০৮ জাতটি জন্য সমন্বিত ফসল ব্যবস্থাপনা প্রস্তাব করা হয়েছে- যা অনুসরন করা হলে ব্রি ধান১০০ থেকে ১.০-১.৫ টন/হে বেশী ফলন পাওয়া যাবে।
জীবনকাল: জাতটির গড় জীবনকাল ১৪৯-১৫১ দিন।
ফলন: ব্রি ধান১০৮ বোরো মৌসুমে হেক্টর প্রতি ৮.৫-৮.৭ টন ফলন দিতে পারে। উপযুক্ত পরিচর্যায় অনুব্ধ পরিবেশে হেক্টর প্রতি ৯.৫-১০.০ টন ফলন দিতে সক্ষম।
চাষাবাদ পদ্ধতি
এ ধানের চাষাবাদ পদ্ধতি অন্যান্য উফশী বোরো জাতের মতোই।
১. বীজ তলায় বীজ বপন: উপযুক্ত সময় নভেম্বরের ৩য়- ৪র্থ সপ্তাহ পর্যন্ত অর্থাৎ (১৮-৩০ নভেম্বর)।
২. চারার বয়স: ৩০-৩৫ দিন।
৩. রোপণ দূরত্ব: ২৫ সে.মি × ১৫ সে.মি
৪. চারার সংখ্যা: গোছা প্রতি ২-৩টি।
৫. সার ব্যবস্থাপনা (কেজি/বিঘা): সারের মাত্রা অন্যান্য উফশী বোরো ধানের জাতের চেয়ে ভিন্ন।
৫.১ ইউরিয়া টিএসপি/ডিএপি এমওপি জিপসাম জিংক
৫.২ সর্বশেষ জমি চাষের সময় তিন ভাগের এক ভাগ ইউরিয়া সহ সম্পূর্ণ টিএসপি, এমওপি, সম্পূর্ণ জিপসাম ও জিংক ছিটিয়ে ভালো ভাবে মাটিতে মিশিয়ে দিতে হবে। ইউরিয়া সার সমান ৩ কিস্তিতে- শেষ চাষের সময় ১ম কিস্তি, রোপনের ৩০ দিন পর ২য় কিস্তি এবং রোপনের ৫৫ দিন পর ৩য় কিস্তি প্রয়োগ করতে হবে।
৬. রোগ বালাই ও পোকামাকড় দমন: উফশী জাত ব্রি ধান১০৮ এ রোগ বালাই ও পোকা মাকড়ের আক্রমণ প্রচলিত জাতের চেয়ে অনেক কম হয়। কমপক্ষে প্রতি ১৫ দিন পর পর মাঠে ক্ষতিকর পোকা মাকড় ও রোগ বালাই অবস্থা পর্যবেক্ষণ করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। জমিতে মাজরা পোকা, পামরী পোকা, বাদামী গাছফড়িং ইত্যাদি পোকা দেখা দিলে সমন্বিত বালাই ব্যবস্থাপনা যেমন আলোর ফাঁদ, হাত জাল, জমিতে পাখি বসার জন্য গাছের ডাল পুতা ও পোকার ডিমের গাদা নষ্ট করার মাধ্যমে অধিকাংশ পোকা-মাকড় দমন করা যায়।
৭. আগাছা দমন: চারা রোপণের পর অন্তত ৪০-৪৫ দিন পর্যন্ত জমি আগাছা মুক্ত রাখতে হবে।
৮. সেচ ব্যবস্থাপনা: রোপণের পর থেকে দুধ আসা পর্যায় পর্যন্ত জমিতে যথেষ্ট পরিমাণে রস থাকা প্রয়োজন। এ সময় খরা দেখা দিলে সম্পূরক সেচ দিতে হবে।
৯. ফসল কাটা: ধান কাটার উপযুক্ত সময় হলো এপ্রিলের শেষ হতে মে মাসের প্রথম সপ্তাহ। শিষের ৯৫% ধান সোনালী রং ধারন করলে ধান কেটে মাড়াই করে শুকিয়ে (১৪% আদ্রতায়) নিতে হবে। এই জাতের ধান ৪-৫ দিন দেরীতে কাটা হলে অতিরিক্ত পরিপক্কতায় ধান ছড়া থেকে সহজে ঝরে পড়েনা, বরং ছড়ার সব ধান পুষ্ট হয়ে ২৫-৩০% ফলন বৃদ্ধি পায়।