আলু বাংলাদেশের একটি অন্যতম জনপ্রিয় সবজি। সেই সাথে অর্থকরী ফসলও। প্রতি বছর এ দেশে আলুর উৎপাদন যে পরিমাণে হিমাগারে রাখা যায় তার চেয়েও বেশি। তার পরও খাদ্য হিসেবে আলুর ব্যবহার দিন দিন এমনভাবে বেড়ে গেছে যে, বাজারে আলুর দাম কখনোই আর কম থাকছে না। সে জন্য প্রতি বছরই আলুর মৌসুম শুরুর আগে শুধু কৃষকরাই নয়, যারা কৃষি কাজের সাথে জড়িত নন এমন অনেকেই আলু চাষের দিকে ঝুঁকে পড়েন। কারণ আলু চাষে স্বল্প সময়ে লাভ বেশি।
কিন্তু কিছু কিছু বিষয়ের প্রতি লক্ষ না রাখায় আলু চাষে অনেকেই কাংক্ষিত ফল বা ফলন পান না। তখন বিভিন্ন জনকে বিভিন্নভাবে দোষারোপ করেন। তাই আলু চাষে নামার আগে থেকেই যদি কয়েকটি বিষয় গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করা হয় তাহলে আলুর কাংক্ষিত ফলন পাওয়া সম্ভব হতে পারে।
জমির প্রকৃতি
আলু চাষের জন্য দোআঁশ ও বেলে দোআশ সবচেয়ে বেশি উপযোগী
আলুর রোপনের উপযুক্ত সময়
বাংলা কার্তিক মাস ও ইংরেজি নভেম্বর মাস আলুর জন্য জমি তৈরি ও বীজ বপনের উপযুক্ত সময়।
জমি তৈরির প্রক্রিয়া
আলু চাষের জন্য জমির প্রকৃতি ভেদে ৫ থেকে ৬ টি চাষ দিয়ে ভালোভাবে ওলটপালট করে নিতে হবে যাতে মাটি মোলায়েম ও ঝুরঝুরে হয়। ঢেলা যুক্ত ও আঁটসাঁট জমিতে আলুর ফলন কম হয়।
শেষ চাষের সময় মাটিতে প্রতি শতকে ১০০ গ্রাম স্টেবল ব্লিচিং পাউডার মিশিয়ে দিলে মাটি বাহিত রোগ ও বীজ বাহিত রোগ কম হয়।
সার ব্যবস্থাপনা
সার | প্রতি বিঘাতে সারের পরিমান (কেজি) |
---|---|
গোবর | ১২০০ |
ইউরিয়া | ৪৫-৫০ |
টিএসপি | ২৮-৩০ |
এমপি | ৩০-৩৫ |
জিপসাম | ১২-১৫ |
জিঙ্ক সালফেট | ১-২ |
বরিক এসিড | ১-১.৫ |
স্যার প্রয়োগ পদ্ধতি
গোবর ও জিংক সালফেট শেষ চাষের সময় জমিতে মিশিয়ে দিতে হবে। অর্ধেক ইউরিয়া, সম্পূর্ণ টিএসপি,
এমপি, জিপসাম ও বরিক এসিড রোপণের সময় সারির দুই পাশে বা জমিতে মিশিয়ে দিতে হবে। বাকি ইউরিয়া ৩০ থেকে ৩৫ দিন পর মাটি তোলার সময় উপরি প্রয়োগ করতে হবে। সার প্রয়োগের পর সাথে সাথে মাটি দিয়ে ভেলি তুলে ঢেকে দিতে হবে।
আলুর বীজ শোধন
অধিক ফলনের জন্য আলু রোপনের পূর্বে বীজ শোধন করতে হবে। আলুর বেশিরভাগ ছত্রাক জনিত
ও ব্যাকটেরিয়া জনিত রোগ বীজের মাধ্যমে হয়ে থাকে তাই বীজ শোধন জরুরী
প্রথম শোধন পদ্ধতিঃ
বীজ প্রত্যয়িত হলে বপনের আগে কোনরকম ব্যবস্থা নিতে হয় না অন্যথায় বীজ শোধন করে নেওয়া ভালো
বীজ শোধনের জন্য মারকিউরিক ক্লোরাইড অথবা ফরমালডিহাইড অথবা ইয়োলো অক্সাইড অফ মার্কারি তে আলুর বীজ কিছুক্ষণ চুবিয়ে রেখে উঠিয়ে নিয়ে শুকিয়ে ফেলতে হবে ।
দ্বিতীয় শোধন পদ্ধতিঃ
বীর আলু লাগানোর পূর্বে কারবেন্ডাজিম গ্রুপের ছত্রাকনাশক স্প্রে করতে হবে অথবা প্রভেক্স অথবা ভিটাভাক্স জাতীয় ছত্রাকনাশক দ্বারা বীজ শোধন করতে হবে। প্রতি লিটার এ তিন গ্রাম ছত্রাকনাশক মিশিয়ে স্প্রে করতে হবে।
এর পর বীজ বপন শেষে সময়মত পোকা ও রোগ দমন করলে জমি থেকে আলুর কাঙ্খিত ফলন পাওয়া যাবে।